Friday, April 10, 2015

রমযান মাসের ফযীলত

রমযান মাসের ফযীলত

আরবী চান্দ্র মাসের নবম মাস হচ্ছে রমযানুল মোবারক বা পবিত্র রমযান মাস। ইসলামী চান্দ্র মাসগুলোর মধ্যে রমযান মাস এক বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। এ মাসের ইবাদত-বন্দেগীর সওয়াব অন্যান্য মাসের তুলনায় সত্তর গুণ অধিক। এ মাসটি হলো সংযম, ত্যাগ-তিতীক্ষা ও পাপ থেকে মুক্ত হবার মাস। এ মাসে রোযা রাখা প্রত্যেক বালেগ-বালেগা, পুরুষ-স্ত্রী নির্বিশেষে সবার উপর ফরয।


এ মাসে একটি রাত্রি আছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। এ রাত্রেই মহান আল্লাহ পাক তাঁর অমূল্য বাণী, মানবজাতির ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবন সুন্দর ও সুখের তৈরি করার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় কিতাব ও অপ্রতিদ্বন্দ্ধী "কোরআন মাজীদ" অবর্তীর্ণ করেন। এ রাত্রিকে বিশ্বের মুসলিম সমাজ লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাত্র মহা সম্মানিত রাত্রি বলা হয়।

রমজান মাসের ইবাদত

রমজান মাসের আরও কয়েকটি ইবাদত ও ফযীলত

পবিত্র রমযান মাসের আরও কয়েকটি ফযীলত ও ইবাদতের কথা বলে এ প্রসংগের ইতি টানবো। আশা করি ধৈর্য হারাবেন না।

রমযান মাস মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। আর এই মাসের ইবাদতে অন্যান্য মাস থেকে অধিক সওয়াব হাসিল হয়। অধিকন্তু রমযান মাসের ইবাদতে মানুষের মধ্যে ফেরেশতাগণের চরিত্র প্রতিফলিত হয়। এতে মানুষের আত্মা ও চরিত্র উভয়ই সংশোধিত হয়। তাই আত্মা ও চরিত্র সংশোধন এবং উন্নতির প্রতিবিধানে এখানে কয়েকটি ইবাদত ও ফযীলতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা গেলঃ-

(ক) এ মাসের চাঁদ উঠলে ঐ রাত্রে দু'রাকাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ ৩ বার করে পাঠ করলে বিশেষ সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়।

(খ) হাদীস শরীফ থেকে "দস্তুরুল কোযাত" নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে, নবী পাক (সাঃ) এরশাদ করেন-রমযান মাসের ১ তারিখের রাত্রে যদি কেউ ২ রাকাত নামায (যেকোন সূরা দ্বারা) আদায় করে, তবে তার আমলনামা লেখার জন্য আল্লাহপাক সাতশত (৭০০) ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তাঁরা উক্ত ব্যক্তির নেকী বৃক্ষরাজির পত্রসমূহের সংখ্যায় লিখে থাকেন আর ঐ পরিমাণ পাপ তার আমলনামা থেকে কেটে দেন।


(গ) আমীরুল মো'মীনীন হযরত আলী (রাঃ) থেকে "তোহফাতুল মুজাক্কেরীন" নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি রমযান মাসে প্রত্যহ মাগরিব ও এশার মর্ধবর্তী সময়ে দু'রাকাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা একবার ও সূরা ইখলাছ ৩ বার করে পাঠ করে, করুণাময় আল্লাহ তা'আলা তার প্রত্যেক রাকাত নামাযের বদেৌলতে ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) ফেরেশতা তার নেকীসমূহ কেয়ামত পর্যন্ত লেখার জন্য নিয়োজিত করেন।

রমযানুল মোবারকের আরজ

রমযানুল মোবারকের আরজ

কেয়ামতের দিন রমযান মাস মানুষের ছুরত ধরে যখন আল্লাহ পাকের সন্নিধানে সেজদায় পড়ে যাবে, গায়েব থেকে তখন আওয়াজ হবে, "হে রমযানুল মোবারক! তুমি কি চাও, আর তোমার রূপ বিনম্র সেজদার উদ্দেশ্য কি?" রমযানুল মোবারক তখন মিনতি করে আল্লাহ পাকের মহান দরবারে আরজ করবে, "হে বারে ইলাহী! আমার রোজাদারগণ আমার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, অত্যন্ত কষ্ট করেছে, তোমার রেজামন্দীর জন্য বিপুল সাধনা করেছে, গ্রীষ্মকালে ভীষণ গরমে জাহান্নাম হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য রোযা রেখেছে। হে রাব্বুল আ'লামীন! বিনীত প্রার্থনা, তুমি তাহাদিগকে এখন দোযখের ভীষণ অগ্নি থেকে ক্ষমা করো।" করুণাময় আল্লাহ্‌ তা'আলা তখন রমযানকে সান্ত্বনা দিয়ে বলিবেন, যাও, তোমার রোজাদারগণকে ক্ষমা করে দিলাম।

অতঃপর মানবরূপী রমযান আবার পুনরায় দরবারে ইলাহীতে বিনীতভাবে আরজ করিবে, "আয় আল্লাহ্‌! এরা ক্ষুধার্ত, এদেরকে বেহেশতী পোষাক দান করো"। আল্লাহ্‌ তখন মানবরূপী রমযানের আবেদনের প্রতিউত্তরে বলবেন, "তোমার যাবতীয় আবেদন মঞ্জুর করলাম। তাদের জন্য বেহেশতী খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র ও সোয়ারীর সবই মজুদ রয়েছে। তার যথেচ্ছা এসব ভোগ করবে।"

রমযানুল মোবারক পুনরায় আরয করিবে, "হে পরম দয়ালু রাহ্‌মানুর রহীম! তোমার দয়ার আশ্রয় নিয়ে তোমার মহান সমীপে করজোড়ে পুনরায় আরজ করিতেছি, তুমি দয়া করে তোমার নিঃসহায় বান্দার চির আকাঙ্খিত রত্ন, তোমার দীদার তাদের নসীব করে তাহাদিগকে কৃতার্থ করো।" করুণাময় রাব্বুল আ'লামীন তখন বলবেন, "যাও, তোমার এ আবেদনও মঞ্জুর করা গেল। অধিকন্তু আমি পূর্বেই ওয়াদা করেছি, আমার নেককার বান্দাদেরকে আমার দীদার প্রদর্শনে সৌভাগ্যবান করব।"


সুবাহানাল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি কতই না মেহেরবান যে, তাঁর বান্দাদেরকে পরকালের আযাব থেকে বাঁচার জন্য কত কিছুই না উসিলা রেখে দিয়েছেন। রমযানুল মোবারকের ন্যায় একটি পবিত্র ও সৌভাগ্যের বস্তু দান করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। সেই রমযানই মানুষের মুক্তির জন্য এতসব আবেদন-নিবেদন ও সুপারিশ করবে। তাই বলি, হে পরম করুণাময় রাব্বুর আলামীন! তোমার অজস্র দানের মধ্যে রমযানুল মোবারকের মত একটি অপূর্ব ও অমূল্য দানের জন্য যদিও আমরা তোমার গোনাহ্‌গার বান্দারা চিরজীবন তোমার সমীপে সেজদায় পড়ে থাকি, তবুও এ প্রকার অপরূপ দানের শোকরে কিঞ্চিৎ পরিমাণও আদায় হবে না্ আমীন, ছুম্মা আমীন।



******************************